পদ্মা সেতুর অগ্রগতি বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন,
‘এরকম খরস্রোতা নদীতে (পদ্মায়) সুপারস্ট্রাকচার করা বিরাট চ্যালেঞ্জ। অনেকেই সন্দিহান ছিল। আল্লাহর রহমতে আমরা করেছি। ওবায়দুল কাদের স্প্যান বসানোর উদ্বোধনে দেরি করতে চেয়েছিল। আমি বলেছি- না। এটা নিয়ে অনেক কিছু হয়েছে। অনেক মানুষকে অপমানিত হতে হয়েছিল। এক সেকেন্ডও দেরি করবো না। আমেরিকান সময় ৩টার দিকে ম্যাসেজ পেলাম সুপারস্ট্রাকচার বসেছে। আমি ছবি চাইলাম। ওই ছবি দেখে আমরা দুইবোন কেঁদেছি। অনেক অপমানের জবাব দিতে পারলাম।’
তিনি আরও বলেন,
‘মানুষের বিশ্বাস, আস্থা অর্জনের চেয়ে রাজনীতিকের জীবনে বড় প্রাপ্তি আর কিছু হয় না।’
যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে তিন সপ্তাহের সফর শেষে দেশে ফিরে বিমানবন্দরে আওয়ামী লীগ আয়োজিত গণসংবর্ধনায় প্রধানমন্ত্রী এই কথা বলেন। শনিবার (৭ অক্টোবর) সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমান ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। পরে বিমানবন্দরেই তাকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী মঞ্চে প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার বিচক্ষণতা ও মানসিক দৃঢ়তার কারণেই কেবল পদ্মা সেতুর স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর উৎসাহেই এই নির্মাণকাজ এতো দ্রুত এগিয়ে চলেছে। ওবায়দুল কাদের বলেন, “সবই ছিল, কেবল ছিলেন না এই প্রকল্পের (পদ্মা সেতু প্রকল্প) রূপকার (শেখ হাসিনা)। আমি বারবার বলেছিলাম সাতদিন পিছিয়ে দিই। তখন তিনি বলেছেন, ‘গভীর কমিটমেন্ট নিয়ে কাজ করেন। আমার জন্য পদ্মা সেতুর কাজ এক মিনিটও বিলম্বিত হবে না’। সেটাই আমদের প্রেরণা।”
উল্লেখ্য, গত ৩০ সেপ্টেম্বর শরীয়তপুরের জাজিরা পয়েন্টে পদ্মাসেতুতে স্প্যান বসানোর কাজের উদ্বোধন করা হয়। সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের স্প্যান বসানোর উদ্বোধন করেন। স্প্যানের ওপর দিয়েই যানবাহন চলাচল করবে। সেদিন তিনি আশা প্রকাশ করেন, ২০১৮ সালের মধ্যেই জনসাধারণের চলাচলের জন্য পদ্মা সেতু খুলে দেওয়া সম্ভব হবে।
জাতিসংঘ সফর শেষে দেশে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাকে সংবর্ধনা দিতে রাজধানীর পথে জড়ো হয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা।
মিয়ানমারের নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানোর সাহসী সিদ্ধান্ত এবং এই সঙ্কটের প্রতি বিশ্ববাসীর মনোযোগ আকর্ষণের জন্য আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এই সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
গত ২১ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে বক্তৃতায় রোহিঙ্গা সঙ্কট অবসানে পাঁচটি প্রস্তাব তুলে ধরেছিলেন শেখ হাসিনা।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে লন্ডন হয়ে শনিবার সকাল সাড়ে ৯টায় দেশে ফেরার পর প্রথমেই ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরে সংবর্ধনা দেওয়া হয় প্রধানমন্ত্রীকে।
বিমানবন্দরের ভিভিআইপি লাউঞ্জে সংক্ষিপ্ত এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রধানমন্ত্রীকে ‘বিপন্ন মানবতার বাতিঘর’ অভিহিত করেন।
ওই অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনাকে প্রথমে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। এরপর ফুল দেওয়া হয় ১৪ দলের পক্ষ থেকে।
বিশিষ্টজনদের পক্ষ ফুলেল শুভেচ্ছা জানান বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান, বিএসএমএমইউর সাবেক উপাচার্য প্রাণ গোপাল দত্ত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হারুণ-অর রশীদ ও বিএসএমএমইউর উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল হাসান খান ফুল দেন প্রধানমন্ত্রীকে।
ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মুর্তজাকে সঙ্গে নিয়ে ক্রীড়াঙ্গনের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে ফুল দেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান।
রামেন্দু মজুমদারের নেতৃত্বে সংস্কৃতিকর্মীরা প্রধানমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। এর মধ্যে ছিলেন আতাউর রহমান, গোলাম কুদ্দুস, সারা যাকের প্রমুখ।
সাহিত্যিক রাহাত খান, চিত্রশিল্পী হাশেম খান, কণ্ঠশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাও এসময় উপস্থিত ছিলেন।
সাংবাদিকদের মধ্যে শুভেচ্ছা জানান প্রধানমন্ত্রীর তথ্য বিষয়ক উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি মুহাম্মদ শফিকুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন, বিএফইউজের সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, আবেদ খান প্রমুখ।
এফবিসিসিআই, বিজিএমইএসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতারাও ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান প্রধানমন্ত্রীকে।
অনুষ্ঠানে সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা দেওয়ার পর সাড়ে ১০টার দিকে বিমানবন্দর থেকে গণভবনের পথে রওনা হন।
এই পুরোটা পথে আওয়ামী লীগের হাজার-হাজার নেতা-কর্মী জড়ো হয়ে তাকে শুভেচ্ছা জানান। হাতে প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন নিয়ে তারা দাঁড়িয়ে ছিলেন সড়কের দুই ধারে। কেউ কেউ গানে গানেও শুভেচ্ছা জানান শেখ হাসিনাকে।
সকাল ১১টার দিকে প্রধানমন্ত্রী গণভবনে ঢুকলে এসএসএফের একটি দল তাকে গার্ড অব অনার দেয়।
ছবিঃ সাইফুল কল্লোল, bdnews24
সংবাদঃ albd.org, বাংলা ট্রিবিউন
You must log in to post a comment.